০১ জানুয়ারী, ২০২৫
ছবি: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সূর্যাস্তের আগের
২০২৫ সাল, ইংরেজি নতুন বছরের শুরু হলো আজ। গতকাল ২০২৪ সালের শেষ দিনের সূর্যাস্ত দেখতে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে নেমেছিলো পর্যটকের ঢল। ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় রাত জেগেই সৈকত পাড়ে অবস্থান নিয়েছিল লক্ষাধিক পর্যটক। বিশেষ করে, কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী বিচের দীর্ঘ সৈকত জুড়ে মানুষ আর মানুষ। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সাগর তীর।
পর্যটকরা জানিয়েছেন, অতীতের সব কষ্ট ভুলে নতুন করে নতুন বছরকে বরণ করতে তাঁদের ছুটে আসা। এছাড়া শেষ দিনের সূর্ষাস্ত ও নতুন বছরের নতুন সূর্যোদয় দেখতে সাগর তীরে চলে আসেন তারা। পাশাপাশি স্থানীয়রাও জড়ো হয়েছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, পযটকেরা সাগরের নোনাজলে গোসলের সাথে উল্লাসও করছেন। স্পিডবোট, ঘোড়া, বাইক নিয়েও ঘুরছেন।
ঢাকার সাভার থেকে আসা পর্যটক সোলতান মাহমুদ বলেন, একদিন আগেই পরিবার নিয়ে চলে আসলাম। সকালে হিমছড়ি, ইনানী গিয়েছিলাম। হোটেলে বিশ্রামের পর সূর্যাস্ত দেখতে আসলাম। নতুন বছরকে নতুনভাবে সাজাতে বছরের প্রথম দিনটা কক্সবাজার কাটাবো।
কুষ্টিয়া থেকে আসা মেহ জাবিন আরা মিতু বলেন, 'সকালের দিকে পরিবার নিয়ে সাগরে অনেক মজা করেছি। বিকেলে সূর্যান্ত দেখার পাশাপাশি পুরনো বছরকে বিদায় দিয়েছে। নতুন বছরে সকলের মঙ্গল কামনা করছি।
এক নব দম্পতি বলেন, অতীতের সব গ্লানি মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মুলত কক্সবাজারে আসা। বছরের নতুন দিনকে স্বরণীয় করতে চাই।
এদিকে কক্সবাজার থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে শহর ও সমুদ্র সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। সৈকতের তিনটি পয়েন্ট প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের মিডিয়া মুখপাত্র আবুল কালাম জানিয়েছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবারও সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ঠেকাতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। চার কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক-বছর থেকেই সৈকতে উন্মুক্ত থার্টি ফার্স্ট উদযাপন বন্ধ রয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এরপরেও আশানুরূপ পর্যটক এসেছে। বেশকিছু হোটেল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ছোট্ট পরিসরে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, 'থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে প্রায় লক্ষাধিকের কাছাকাছি পর্যটক এসেছে। প্রায় হোটেল রুম বুকিং হয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ পর্যটক আর-ও কয়েকদিন থাকবেন বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, পর্যটক-দর্শনার্থী মিলে কয়েক লাখ মানুষের মিলনমেলা হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু সে পরিমাণ পর্যটক আসেনি। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পর্যটকরা আরও কয়েকদিন থাকবে বলে আশা করছি।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন ও শীতকালীন ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছিল কক্সবাজারে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সমপরিমাণ পর্যটক এসেছে। এতে চাঙ্গা হয়েছে পর্যটন ব্যবসা বাণিজ্য।
তিনি বলেন, সরকারের নিয়ম মেনে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন দু'হাজার পর্যটক। বিগত সময়ে অনেক ভ্রমণপিপাসু সেন্টমার্টিনে অবস্থান করে নতুন বছরকে বরণ করতো।
তারকা মানের হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নূর সোমেল বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে ছোট্ট পরিসরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, হোটেলের একটি কক্ষও খালি নেই। সব অগ্রিম বুকিং হয়েছে। এছাড়া থার্টি ফার্স্ট নাইটে সাশ্রয়ী মূল্যে রাখা হয়েছে গালা ব্যুফে ডিনার।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. তানভীর হোসেন বলেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিবেচনায় এবারও বিচে বা অন্য কোনো খোলা স্থানে অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের থার্টি ফার্স্ট সংক্রান্ত মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে, পর্যটকরা চাইলে নিজেদের মতো করে নতুন বছর উদযাপনে মাঝরাত পর্যন্ত বিচে ঘুরতে পারবেন। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী বিশেষ নজরদারির আওতায় রয়েছে কক্সবাজার। শহরের অন্তত ১০টি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পরীক্ষা হয়েছে। তিনি এবারে উন্মুক্ত কোনো আয়োজন থাকছে না। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে তারকামানের কিছু সংখ্যক হোটেলে অভ্যন্তরীণ আয়োজন ছিলো। সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা নজরদারি চালাচ্ছে এবং যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারের সব পর্যটন স্পটে উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি, ফটকা ফোটানো, কনসার্টসহ গান-বাজনা সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের অতিথিদের জন্য নববর্ষ উদযাপনে ইনডোর আয়োজন করতে পারে। এজন্য বেশকিছু নিয়মনীতি মেনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
Good news
Good