২৯ এপ্রিল, ২০২৩
ছবি: মৃৎশিল্পীদের তৈরিকৃত তৈজসপত্র
প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। ফেনী সদর ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে! আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা শহরের পাশাপাশি গ্রামে ও কমে গেছে।
কালের বির্বতন আর শিল্পায়নের যুগে সাতপুরুষের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। আজও দৌলতপুর গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের মৃৎশিল্পী ও তাদের পরিবার সাতপুরুষের পেশাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে।
প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দাপটে পাল সম্প্রদায়ের মৃৎশিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত মৃৎশিল্পীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে; অনেকে সাতপুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশাকে বেছে নিচ্ছে। সদরের ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর পালপাড়ায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আগে সদরের ধলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০ টি পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্তমানে মাত্র ১৩ থেকে ১৪ টি পরিবার সরাসরি মৃৎশিল্পের সাথে সম্পৃক্ত আছে। এই পেশায় ভর করেছে অভাব অনটন।
পহেলা বৈশাখ ও মেলা পার্বনেও তেমন চাহিদা নেই মাটির তৈরি তৈজসপত্রের। আগে মাটির কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, দই পাতিল, মুচি ঘট, মুচি বাতি, মিস্টির পাতিল, রসের হাঁড়ি, ফুলের টব, জলকান্দা, মাটির ব্যাংক, প্রতিমা, বাসন ও মাটির খেলনাসহ ৮০ ধরনের সামগ্রী তৈরি হতো।
বর্তমানে অতিরিক্ত দামে জ্বালানি ও দূর দূরান্ত থেকে মাটি ক্রয় করার কারণে মাত্র সাত থেকে আট ধরনের মাটির তৈজসপত্র তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে এখানকার স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে এখানকার কুমোরপাড়া থেকে মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেতেন। মৃৎশিল্পীরা তাদের হাতের স্পর্শে মাটির সামগ্রীতে ফুটিয়ে তুলতেন মানুষের হাসি-কান্না, সুখদুঃখের অনুভূতি ও প্রেম-বিরহের নানা দৃশ্যপট।
কালের পরিক্রমায় বাহারি ডিজাইনের দস্তা,অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক, স্টিল, চিনামাটি, মেলামাইন, বিদ্যুৎ চালিত রাইসকুকার, সিরামিক ও সিলভারের তৈরিকৃত জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে মাটির তৈরি
তৈজসপত্রের চাহিদা নেই বললে চলে। বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিক সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তারা এখন কোনঠাসা। ফলে গ্রাম বাংলার এই শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি তাদের দুর্দিন যাচ্ছে।
দৌলতপুর গ্রামের পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা জানান, বংশপরম্পরায় আমাদের পেশা মৃৎশিল্পের সাথে আমরা এখনও জড়িত আছি। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। মাটির তৈজসপত্র বানানোর প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি অতিরিক্ত দামে ছাগলনাইয়া থেকে সংগ্রহ করার কারণে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
একই গ্রামের পালপাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ মৃৎশিল্পী স্বপ্না রানী পাল জানান, গত কিছুদিন আগের পহেলা বৈশাখে উপলক্ষে মাটির তৈরি খেলনা
তৈরি করেছিলাম বিক্রির উদ্দেশ্য। কিন্তু মাটি ও খড় বেশি দামে কেনার কারণে খেলনার বিক্রি মূল্য বেড়ে যায়, ফলে বেশীরভাগ খেলনা বিক্রি করতে পারি নাই। বেশির ভাগ খেলনা বিক্রি করতে না পারার কারণে পুঁজিও উঠাতে পারি নাই।
সরকার এই শিল্পের জন্য আলাদা ব্যাংক ঋণ, সরকারি -বেসরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করলে মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনগন ও মৃৎশিল্পীরা।
Good news
Good